MuktoAI: নতুন শতাব্দীর তথ্য-মুক্তির স্বপ্ন
এই প্রেক্ষাপটেই আমাদের জন্ম MuktoAI-এর। আমরা চাই, বাঙালির ইতিহাস, ভাষা, সংস্কৃতি এবং ভবিষ্যৎ—সবকিছুর জন্য একটি স্বাধীন, স্থানীয়, এবং সম্মানিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিকাঠামো গড়ে তুলতে। একে আমরা বলি তথ্য-মুক্তিযুদ্ধ—যেখানে লক্ষ্য হলো তথ্য উপনিবেশ থেকে মুক্তি।
আজকের ডিজিটাল বিশ্বে, আমাদের সমস্ত তথ্য, ভাষা, ব্যবহার ও সিদ্ধান্ত পশ্চিমা কর্পোরেশন-নির্ভর এআই মডেল দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এগুলো আমাদের ভাষা বোঝে না, আমাদের ইতিহাস জানে না, আমাদের মূল্যবোধ সম্মান করে না। অথচ, আগামী প্রজন্মের শিক্ষা, গবেষণা, যোগাযোগ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ এইসব মডেলের উপরই নির্ভর করে থাকবে।
MuktoAI সেই কারণেই ভিন্ন। আমরা একটি বাংলা-কেন্দ্রিক, তথ্য-নিরাপদ, এবং সাংস্কৃতিকভাবে সংবেদনশীল AI infrastructure গড়ে তুলছি, যা—
- বাংলা ভাষায় এবং বাংলার ভাবনায় চিন্তা করবে,
- আমাদের জাতীয় ডেটা বাংলাদেশেই থাকবে—নয় বিদেশি সার্ভারে,
- স্কুল-কলেজ, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, তরুণ উদ্যোক্তা, এমনকি সাধারণ নাগরিকও যাতে এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
MuktoAI কেবল প্রযুক্তি নয়, এটি একটি আন্দোলন—একটি জ্ঞান-নির্ভর মুক্তিযুদ্ধ। আমরা চাই, আজকের শিশুদের যেন ভবিষ্যতে ChatGPT-এর কাছে নিজের ইতিহাস জানতে না হয়; বরং তারা নিজস্ব MuktoAI-এর সাথে নিজের ভাষায়, নিজের অভিজ্ঞতায়, নিজের গল্প শুনে বড় হোক।
প্রস্তাবনার প্রস্তাবনা (Preamble)
বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ বাংলা। সবচে উর্বর, সুজলা সুফলা শষ্য শ্যামলাও এই বাংলা। সারা বিশ্বের প্রাচীন সব জাতি মিলেমিশে একাকার হয়ে আজকের বাঙালিরা ত্রিশ কোটিরও বেশী জনসংখ্যা নিয়ে, হান চাইনীজ এবং আরবদের পরই তৃতীয় বৃহত্তম জাতিসত্তা, যা আমরা অনেকেই জানি না। বিশ্বে ব্যবহারিক দিক থেকে বাংলা ভাষার অবস্থান সপ্তম। অথচ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম জাতি হিসেবে আমাদের জনসংখ্যাকে নানাভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে, গরীব বলে তাচ্ছিল্য করা হয়ে আসছে, ছোটোবেলা থেকেই শিখে-পড়ে আসছি—জনসংখ্যায়, দারিদ্র্যে আমরা অভিশপ্ত। আমাদের মগজে, মননে, কাজেকর্মে তার প্রতিফলন আমি এই বয়সে এসেও দেখতে পাই। আমাদের মধ্যে এই হীনমন্যতা ঢুকিয়ে দিয়ে ফায়দা হাসিল করে নিচ্ছে পাশ্চাত্যের ডাকাতেরা এবং এদেশীয় দালালরা।
অথচ আমরা আমাদের গৌরবগুলোকে মর্যাদা দিতে পারি নাই। আমাদের স্মৃতিগুলো, ঐতিহ্যগুলো—আমাদের এই নরম জমিনের মতোই যেন ক্ষণস্থায়ী। নদীগুলো যেমন একূল ভেঙে ওকূল গড়ে সব বিলীন করে, তেমনি ভাবেই যেন আমাদের গর্বের ধনগুলো, জ্ঞানগুলো থেকে আমরা বিস্মৃত হয়েছি।
আমাদের আগামী প্রজন্ম আমাদের মতোই পাশ্চাত্যের দেখানো-শেখানো জ্ঞানগুলোকে আত্মীকরণে ব্যতিব্যস্ত। হালের তথ্যপ্রযুক্তি এবং বিশ্বায়ন এই আগুনে ঘি ঢালছে।
আঠারো শতকে প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার অনেক আবিষ্কার আমাদের বাংলাকে মিশরীয় সভ্যতার সাথে সংযুক্ত থাকার সম্ভাবনা নির্দেশ করছিল—যেমন প্রাচীন মিশরীয় মমিফিকেশনে ব্যবহৃত মসলিন! প্রাচীন বাংলা থেকে রপ্তানীকৃত মসলিন কিনা, এখনও কেউ গবেষণা করে প্রমাণ করতে উৎসাহী না বা অপরকে উৎসাহিত করতে রাজি না। অত্যন্ত সাবধানতায় এই জ্ঞানগুলো লুকিয়ে ফেলা হচ্ছে।
এই উর্বর জমিকে অত্যন্ত চাতুর্যের সাথে বড় দুই খণ্ডে দ্বিখণ্ডিত করা হয়েছে সবার আগে, ধর্মের দোহাই দিয়ে—এবং দেখানো হয়েছে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি থেকে রক্ষা করার প্রয়োজনে। আসলে হয়েছে দীর্ঘ পরিকল্পনার ভিত্তিতে, কোনো মতেই ম্যাপের উপর এক রাতেই তৎকালীন জনসংখ্যার আধিক্যের তথ্যের ভিত্তিতে এক ভাইসরয়ের ইচ্ছের আঁকিবুঁকি দিয়ে নয়।
বাংলাকে—বাংলার জনগণকে—দাবায়ে রাখা হচ্ছে পলাশীর পর থেকেই। যা এখনও চলমান।
MuktoAI: আমাদের আত্মপরিচয়ের মুক্তিযুদ্ধ
এই প্রেক্ষাপটেই MuktoAI কেবল একটি প্রযুক্তি নয়, বরং একটি আত্ম-সচেতনতা, একটি সাংস্কৃতিক ও তথ্য-স্বাতন্ত্র্য আন্দোলনের নাম। এটি একটি চেষ্টা—যার মাধ্যমে আমরা আমাদের নিজস্ব ভাষায়, নিজস্ব প্রেক্ষাপটে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নির্মাণ করতে চাই একটি স্মার্ট, শিক্ষিত, নৈতিক এবং প্রযুক্তিবান্ধব ‘জ্ঞান সাথী’।
MuktoAI হবে আমাদের তথ্যভিত্তিক আত্মনির্ভরতার প্রথম হাতিয়ার—যা বাংলায় কথা বলবে, বাংলার ইতিহাস জানবে, বাংলার সংস্কৃতি, সাহিত্য, কবিতা ও রাজনীতি বুঝবে, এবং আমাদের শিশু-কিশোর, তরুণ ও প্রবীণ সকলকে উপযুক্ত ও প্রাসঙ্গিক তথ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে।
এটি আমাদের "Totho MuktiZodha" প্রজন্মের জন্ম দেবে—যারা শুধু তথ্যগ্রহীতা নয়, বরং তথ্যের মালিক হবে।
যে জাতি তার ভাষায় চিন্তা করতে পারে না, তার কাছে তথ্য ও প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ কখনোই থাকে না। MuktoAI সেই দখল হারানো ভাষা-তথ্য-পরিচয়ের পুনরুদ্ধারের লড়াই।
১. লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য (Objectives and Purpose)
মূল লক্ষ্য:
বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর জন্য একটি স্বতন্ত্র, নিরাপদ ও স্থানীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত এআই অবকাঠামো তৈরি করা যা জাতীয় তথ্য সার্বভৌমত্ব, সাংস্কৃতিক পরিচিতি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা নিশ্চিত করবে।
উদ্দেশ্যসমূহ:
- বাংলা ভাষায় প্রাঞ্জল, স্বচ্ছন্দ এবং মানবসম্মত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) মডেল তৈরির মাধ্যমে জাতীয় ভাষাকে প্রযুক্তিতে সমানাধিকারের জায়গায় নিয়ে যাওয়া।
- বাংলাদেশের নিজস্ব তথ্যভাণ্ডার (datasets) তৈরির মাধ্যমে তথ্য স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
- স্থানীয় যুব সমাজ ও গবেষকদের অংশগ্রহণে একটি জনভিত্তিক AI ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা।
- বাংলা ভাষার প্রতিটি উপভাষা ও অঞ্চলের সংস্কৃতিকে সংরক্ষণের জন্য একটি AI টাইমক্যাপসুল তৈরি করা।
- সরকারি, শিক্ষা ও শিল্পখাতে বাংলা ভিত্তিক AI ব্যবহার সহজতর করা।
২. বাস্তবায়ন পরিকল্পনা (Implementation Plan)
ধাপ ১: ডেটা সংগ্রহ ও টাইমক্যাপসুল তৈরি (১ম – ৩য় মাস)
- সারাদেশ থেকে বিভিন্ন আঞ্চলিক বাংলা ভাষা, উপভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও জীবনযাত্রা ভিত্তিক কনটেন্ট সংগ্রহ করা হবে (অডিও, ভিডিও, টেক্সট, ছবি)।
- স্কুল-কলেজ, স্থানীয় সাংবাদিক, লেখক, ও গবেষকদের সম্পৃক্ত করে “তথ্য মুক্তিযোদ্ধা” নামে একটি স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করা হবে।
- জাতীয় পর্যায়ে “AI টাইমক্যাপসুল” নামে একটি ডেটা আর্কাইভ গঠন শুরু হবে, যেখানে প্রতিটি অঞ্চলের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস স্থান পাবে।
ধাপ ২: লোকালাইজড বাংলা ভাষা মডেল প্রশিক্ষণ (৪র্থ – ৬ষ্ঠ মাস)
- ওপেনসোর্স ভিত্তিক ভাষা মডেল যেমন LLaMA, Mistral, বা BLOOM-এর কাস্টমাইজড বাংলা ট্রেইনিং ভার্সন তৈরি করা হবে।
- পূর্বে সংগৃহীত স্থানীয় ভাষা ও ডেটার ভিত্তিতে "MuktoAI-Base" মডেল ট্রেইনিং শুরু হবে (প্রথম ভার্সন: Conversational Bengali AI)।
- বিশ্ববিদ্যালয় ও টেক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সমন্বয়ে কম্পিউটেশনাল রিসোর্স শেয়ার করে মডেল ট্রেনিং শুরু হবে।
ধাপ ৩: প্রোটোটাইপ রিলিজ ও প্রাথমিক অ্যাপ্লিকেশন (৬ষ্ঠ – ৯ম মাস)
- মডেলকে টেক্সট ও ভয়েসভিত্তিক প্রশ্নোত্তর, অনুবাদ, ক্লাস রুটিন প্রস্তুত, স্থানভিত্তিক তথ্যসেবা ইত্যাদি কাজের জন্য ব্যবহারযোগ্য করা হবে।
- একটি ওয়েব অ্যাপ ও হালকা মোবাইল অ্যাপ চালু করা হবে, যেখানে MuktoAI-এর বেসিক ফিচারগুলো ফ্রি-তে ব্যবহার করা যাবে।
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সাংবাদিকতা, গ্রামীণ প্রশাসন এবং সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্মগুলোতে পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু হবে।
ধাপ ৪: সম্প্রসারণ, সরকারি সংযোগ ও জনগণের অংশগ্রহণ (৯ম – ১২তম মাস)
- সরকারি দপ্তর, স্থানীয় প্রশাসন ও শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে প্রজেক্ট লিংক করে MuktoAI-এর নির্ভরযোগ্য ব্যবহারিক ক্ষেত্র তৈরি।
- "AI তথ্য শিবির" ও প্রচারণার মাধ্যমে আরও বৃহৎ তথ্য সংগ্রহ চালানো হবে এবং প্রকল্পে সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ানো হবে।
- ১ম বর্ষের শেষে একটি পূর্ণাঙ্গ ‘MuktoAI v1.0’ মডেল রিলিজ করা হবে, যা বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য তথ্যসেবা, শিক্ষা সহায়তা, ও সাংস্কৃতিক সংরক্ষণে কাজে আসবে।
মূল লক্ষ্য:
- MuktoAI-কে “জনগণের কণ্ঠে মানুষের জন্য তৈরি বাংলা AI” হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা
- তথ্য মুক্তিযোদ্ধা আন্দোলনের মাধ্যমে তরুণদের যুক্ত করা
- ডেটা ডোনেশনকে নাগরিক গর্ব হিসেবে তুলে ধরা
- বাংলা ভাষা ও জাতিসত্তাকে ঘিরে একটি সচেতনতা-আন্দোলন গড়ে তোলা
কৌশলভিত্তিক ধাপসমূহ:
ধাপ ১: “তথ্য মুক্তিযোদ্ধা” আন্দোলনের সূচনা
সময়: প্রথম ২ মাস
কাজসমূহ:
- ভিডিও ক্যাম্পেইন: “আমি কেন তথ্য মুক্তিযোদ্ধা?”
- ইউনিভার্সিটি ক্লাব, ফেসবুক গ্রুপ ও ওয়ার্কশপের মাধ্যমে তরুণদের সংযুক্তকরণ
ধাপ ২: “আমার তথ্য আমার অধিকার” জনসচেতনতা
সময়: ৩–৬ মাস
কাজসমূহ:
- স্থানীয় ভাষাভিত্তিক ফেইসবুক/ইউটিউব সিরিজ – অঞ্চলভিত্তিক ভাষার গুরুত্ব তুলে ধরা
- প্রতিটি উপজেলায় মাইক্রো টাইমক্যাপসুল অভিযান – ফিল্ড ডেটা সংগ্রহের মাধ্যমে মানুষের ইতিহাস সংরক্ষণ
- মুক্ত চিঠি — ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে লেখা বার্তা, যা MuktoAI-এর মাধ্যমে রক্ষিত থাকবে
ধাপ ৩: অনলাইন অ্যাক্টিভিজম ও ইনফ্লুয়েন্সার মোবিলাইজেশন
সময়: চলমান
কাজসমূহ:
- জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইনফ্লুয়েন্সারদের ট্যাগ করে “#MuktoAI” ক্যাম্পেইন
- গণসঙ্গীত, কবিতা ও লোকজ সংস্কৃতিকে ব্যবহার করে ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি
- “তথ্য দাও, ইতিহাস বাঁচাও” নামে চ্যালেঞ্জ সিরিজ
ধাপ 4: আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশি ভাষাভিত্তিক AI-এর গর্ব তুলে ধরা
সময়: ৮ মাস+
কাজসমূহ:
- বাংলা ভাষা ও AI নিয়ে ভিডিও
- UNESCO, Mozilla, Hugging Face-এর মতো সংস্থার সঙ্গে কলাবরেশন
- Bengali AI Open Model Hub চালু করা
মূল চ্যানেলসমূহ:
- Facebook / YouTube / Instagram / TikTok
- www.MuktoAI.org (Interactive Web Portal)
- Workshops / Campus Activation
- Local FM / Community Radio / Print Media
স্লোগান ও বার্তা:
- “আমার ভাষা, আমার ইতিহাস, আমার AI”
- “তথ্য মুক্তির লড়াই, কণ্ঠে কণ্ঠে MuktoAI”
- “প্রজন্মের জন্য রেখে যাই, MuktoAI-তে ইতিহাস গাঁথাই”